মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০১:৫৮ অপরাহ্ন

টাঙ্গাইলে সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা ইলু হত্যা দাম্পত্য কলহে

টাঙ্গাইলে সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা ইলু হত্যা দাম্পত্য কলহে

স্বদেশ ডেস্ক:

টাঙ্গাইলে সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা খন্দকার রেদওয়ানা ইসলাম ইলু হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশের ধারণা, দাম্পত্য কলহের জেরেই এ হত্যাকা- ঘটেছে। আর স্বজনরা দাবি করেছেন, ইলুকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করেছেন স্বামী দেলোয়ার হোসেন মিজান। এ ঘটনায় মির্জাপুর থানায় হত্যামামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে দেলোয়ার হোসেন মিজানকে। বাদী নিহতের ভাই খন্দকার আসাদুল ইসলাম আবিদ। মিজান পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলছে।

এদিকে নিহতের ৬ দিনের শিশুকন্যাকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মাকে হাসপাতালের কেবিনে হত্যা এবং বাবা পলাতক থাকায় নবজাতকটির ঠাঁই এখনো কুমুদিনী হাসপাতালেই।

গতকাল রবিবার দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মাঠে খন্দকার রেদওয়ানা ইসলামের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি, টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাফর আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক এলেন মল্লিকসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা। খন্দকার রেদওয়ানা ইসলাম ইলু রংপুরের রোমানতলা এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের মেয়ে।

সেখানেই তাকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। তার স্বামী সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন মিজানের গ্রামের বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ভাঙ্গারিয়া গ্রামে। তার বাবা এলাহী মোল্লা। মিজান সম্প্রতি টাঙ্গাইল থেকে ভোলা জেলায় বদলি হন।

২০১৯ সালে ইলুর সঙ্গে মিজানের বিয়ে হয়। বাদীর অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই তার বোনের ওপর অমানবিক অত্যাচার নির্যাতন করে আসছিল মিজান ও তার পরিবারের সদস্যরা। নিজের পরিবার ও সংসারের দিকে চেয়ে সব অত্যাচার সহ্য করে গেছে বোন। একপর্যায়ে জানা যায়, মিজান আরেকটি বিয়ে করেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় ইলুর সঙ্গে তার ঝগড়া হতো। মিজান সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। হাসপাতালেই সে ইলুকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি মিজানকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

একই অভিযোগ করেন নিহতের বোন খন্দকার রেদওয়ানা কলি। তিনি বলেন, আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার দিন মামি খোদেজা বেগম হাসপাতালের তিনতলা থেকে ইলুর কাছে যাচ্ছিলেন। কিন্তু রুমের সামনে গিয়ে দেখেন, দরজায় তালা ঝুলানো। কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকদের বিষয়টি জানালে তারা চাবি এনে দরজা খোলে দেখেন বোনের লাশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মির্জাপুর থানার এসআই শাহজাহান খান জানান, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ ছিল। বিরোধ মীমাংসা করতে জেলা কর্মকর্তারা উদ্যোগও নিয়েছিলেন। সেই কলহের জের ধরেই এ হত্যাকা- ঘটে থাকতে পারে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আসামি মিজানুর রহমানকে ধরতে জোর প্রচেষ্টা চলছে। আশা করি অতিদ্রুতই ধরা পড়বে।

মির্জাপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার দীপংকর ঘোষ জানান, টাঙ্গাইল সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মির্জাপুর সার্কেল) দীপংকর ঘোষ জানান, নিহত ইলুর ময়না তদন্তের পর নিয়মিত মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আশ^াস দেন তিনি।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, এই হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি। তদন্তসাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছি, যাতে এ রকম ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে আর কেউ সাহস না পায়।

গত শনিবার (২৭ মার্চ) বিকালে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালের একটি ভিআইপি কক্ষ থেকে খন্দকার রেদওয়ানা ইসলাম ইলুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রেদওয়ানা প্রসব ব্যথা নিয়ে গত ২২ মার্চ এই হাসপাতালে ভর্তি হন। ওইদিনই তিনি এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এর পর থেকে কন্যাসন্তানকে আইসিইউতে রাখা হয়। চার দিন আগে রেদওয়ানা ইসলামকে চিকিৎসকরা ছুটি দেন। কিন্তু নবজাতক হাসপাতালে থাকার কারণে তিনি হাসপাতালেই থেকে যান। শনিবার সকালে মিজান আসেন হাসপাতালে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। বিকালে হাসপাতালের নার্স ইলুর কক্ষ বাইরে থেকে তালাবদ্ধ দেখতে পেয়ে কর্তৃপক্ষকে জানান। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কক্ষের বিকল্প চাবি দিয়ে তালা খুলে ভেতরে রেদওয়ানার লাশ পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877